
যুগান্তর প্রত্রিকায় প্রকাশিত মানবিক কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছে বগুড়ার পুলিশ
০৭ জুন, ২০২০
০৬ জুন ২০২০ খ্রিঃ যুগান্তর প্রত্রিকায় প্রকাশিত মানবিক কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছে বগুড়ার পুলিশ বগুড়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। করোনার বিস্তার রোধে দায়িত্ব পালন করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরও মনোবল অটুট রেখে মাঠে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। করোনা সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি মানুষের মাঝে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করছেন তারা। অসুস্থদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন। করোনায় কেউ মারা গেলে লাশ দাফনের দায়িত্ব পড়ছে পুলিশের ওপর। এসব কারণে পুলিশ স্থানীয়দের মাঝে প্রশংসিত হয়েছে। মার্চের শেষের দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জনগণকে সচেতন করতে বগুড়ার পুলিশ ২০ হাজার লিফলেট বিতরণ করেছে। পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞার নেতৃত্বে লিফলেটগুলো বিতরণ করা হয়। জলকামান দিয়ে জেলা সদর ও ১২ উপজেলায় জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে। এ কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনেও এ কার্যক্রম চলমান আছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে পুলিশ। পুলিশ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে এজন্য সদস্যদের মাঝে সুরক্ষাসামগ্রী পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার ও চশমা বিতরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনের ব্যবস্থা করছেন পুলিশ সদস্যরা। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ডিএমপির এসআই মুজিবুর রহমান তালুকদারের মরদেহ শাজাহানপুরের শাকপালায় যথাযথ মর্যাদায় দাফন করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা লকডাউন কার্যকরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আন্তঃজেলা ও আন্তঃউপজেলা গণপরিবহন বন্ধে দিন-রাত মাঠে রয়েছে তারা। বিদেশ ফেরত ও দেশে করোনা উপদ্রুত এলাকা থেকে আসা লোকজনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত, আক্রান্ত পরিবারগুলোকে লকডাউন এবং রোগীদের আইসোলেশনে পাঠানোর কাজ করছে পুলিশ। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় ‘ডোর টু ডোর শপ’ চালু করে মানুষের ব্যাপক সাড়া ও প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির সময় হোতাদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর উদ্ধার করা চাল আদালতের নির্দেশে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। যারা ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারেন না গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে গোপনে বা প্রকাশ্যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার নিজে বগুড়ার খ্যাতনামা সুকুমার বাউলের সোনাতলার বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। এ দুঃসময়ে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতিও (পুনাক) দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনটি প্রায় আড়াইশ’ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। এদিকে জনগণকে সহযোগিতা দিতে গিয়ে জেলা পুলিশের ৩০ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ও অন্যরা বগুড়া পুলিশ লাইন্সে স্থাপিত আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা যুগান্তরকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইজিপি ড. বেনজীর আহমদের নির্দেশে পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। করোনার বিস্তার রোধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। কঠোর পরিশ্রমের পরও পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা আছে। এ দুর্যোগে পুলিশ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। পুলিশ সুপার বলেন, শুধু করোনাভাইরাস মোকাবেলা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ রাত জেগে টহল দিচ্ছে। জেলায় অপরাধ নেই বললেই চলে।