রূপপুর প্রকল্পে চাকরি বাণিজ্য প্রতারক চক্রের সদস্য দুই বাবা-ছেলে আটক।

ভালো কোম্পানি। লোভনীয় বেতন সুবিধা। প্রতারক চক্রের রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প (আরএনপিপি) ঘিরে প্রচারণা। আরএনপিপিতে চাকরি প্রত্যাশায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে শত শত বেকার চাকরি প্রত্যাশি যুবক। এসব যুবকদের টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দায়ের প্রতারক চক্রের সদস্য দুই বাবা-ছেলেকে আটক করে ঈশ্বরদীর রূপপুর ফাঁড়ি পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) আটককৃতদের পাবনা আদালতে প্রেরণ করা হয়। আটককৃতরা হলেন- পাবনা চাটমোহর উপজেলার চরভবানিপুর সাহাপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে ময়নুল ইসলাম (৫০), ময়নুলের ছেলে জায়েদ বিন সিয়াম (২৫)। তারা অনিক এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামক ভূয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক। তাদেরকে উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর জিগাতলা মোড়স্থ আব্দুল কুদ্দুসের ভাড়া বাসা থেকে সোমবার আটক করা হয়। বর্তমানে প্রতারক বাপ-বেটা পাবনা সদর কাচারীপাড়ায় থাকেন এবং চররূপপুর জিগাতলা মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অনিক এন্টারপ্রাইজ নামক কোম্পানি খুলে এই প্রতারণা শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে ও ভূক্তভোগীদের সুত্রে জানা যায়, রূপপুর প্রকল্পে (আরএনপিপি) রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর এইচ আর (এডমিন), কতিপয় দো-ভাষী, ফোরম্যান তাদের নির্ধারিত দালালদের সহযোগিতায় উচ্চ হারে ঘুষের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করছেন। এতে স্থানীয়সহ দূরদূরান্ত থেকে হঠাৎ করে আসা চাকরীিপ্রত্যাশি বেকার যুবকরা প্রকল্পে চাকরি পান না। ঘুষ নিয়ে চাকরী প্রদানকারীদের সঙ্গে তাই যোগাযোগ করতে তাদের আরএনপিপি এলাকা রূপপুর, পাকশীসহ ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। আর দিনের পর দিন তাদের কোম্পানির বক্সে সিভি দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা উচ্চহারে ঘুষ দিতে পারেন তারা চাকরী পান। অবশিষ্টরা হতাশায় ভূগছেন। কিন্তু কেউ এসব চাকরী বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। চাকরী প্রত্যাশি ও প্রতারণায় শিকার সাইফুল ইসলাম, তারিকুজ্জামান, আরমান রানা, সিরাজুল ইসলামসহ বেশ কিছু ভূক্তভোগিরা জানান, তারা কত বেতনে আরএনপিপির ম্যাক্স বাংলাদেশ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কোম্পানির কাজ না থাকায় অনেকের চাকরি চলে গেছে। তারা প্রকল্পে রাশিয়ান কোম্পানি এনারগোস্পেস মানতাস, তেস্ত রোসেম, নিকিমথ, ইএসকেএম, অর্গানাগোস্তরায়সহ অন্যান্য বড় কোম্পানিতে চাকরি লাভের চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব কোম্পানির এইচ আর (এডমিন), কতিপয় দো-ভাষী, ফোরম্যান পরস্পরের যোগ সাজছে প্রতিজনের নিকট থেকে ৩০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে চাকরী প্রদান করছেন। আবার তাদের নিয়োগকৃত বাইরের দালালদের মাধ্যমে চাকরী পেতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। কিন্তু এতো টাকা আমরা দিতে না পারায় চাকরী না পেয়ে বেকার হয়ে পড়েছি। এই সুযোগে অনিক এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। তারা পাবনা হেমায়েতপুরের ভবানীপুরস্থ সোলার পাওয়ার প্লান্টে ভালো বেতন সুবিধায় চাকরী দিবেন বলে জানান। তারা মেডিক্যাল ও কাগজপত্র ঠিক করতে প্রায় শতাধিক ব্যক্তির প্রতিজনের নিকট থেকে ৮ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। গত সোমবার নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নিয়োগপত্র না দিয়ে টালবাহানা করায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়। রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) আতিকুল ইসলাম আতিক জানান, আটককৃতরা বাবা-ছেলে। তারা ভূয়া অনিক এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি খুলে অস্তিত্বহীন পাবনার হেমায়েতপুর ভবানিপুর সোলার পাওয়ার প্লান্টে চাকরী দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ভূক্তভোগিরা বাপ-বেটাসহ সানোয়ার হোসেনসহ অজ্ঞাত আরো ৩/৪ উল্লেখ করে মামলা করেছে। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারও প্ররোচনায় ভূয়া প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে লোভনীয় সুবিধা পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে প্রতারিত না হওয়ার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করা হচ্ছে।







সর্বশেষ সংবাদ
DIG Homepage