অভিনব কৌশলে টাকা চুরি.. অতপর তথ্য উদঘাটনে আসামী গ্রেফতার

২৩ জানুয়ারী, ২০২০

গত ইং ০৮/০১/২০২০ তারিখে বেলা ১২.২৫ মিনিট পরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন,“ দাদা আমার খুব বিপদ, আমার এক আত্বীয়ের ৫ লক্ষ্য চুরি হয়ে গেছে,’’ আমি বললাম আপনি কোথায়, তিনি বললেন “আমি পাবনা শহরে সোনালী ব্যাংকের সামনে’’ আমি দ্রুত সোনালী ব্যাংকের সামনে গিয়ে যা শুনলাম তা সংক্ষেপে হল, একজন ভদ্রমহিলা তার স্বামীকে নিয়ে সঞ্চয়পত্রের টাকা উত্তোলনের জন্য সকাল ১১.৫০ মিনিটে পাবনা শহরে সোনালী ব্যাংকে আসে এবং ১২.১২ মিনিটে টাকা উত্তোলন করে ভদ্রমহিলা তার হাত ব্যাগে করে নিয়ে সোনালী ব্যাংকের সিড়ি ভেংগে নেমে ২০/২৫ গজ সামনে রাস্তায় নেমে দেখেন তার ব্যাগে টাকা নাই । ভদ্রমহিলা বেশ অসুস্থ বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা যাচ্ছে না । খেই হারিয়ে ফেলছেন । তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা । তিনি শুধু বললেন যে, সোনালী ব্যাংকের সামনে বেশ ভীড় ছিল, তার পাশে গা ঘেষে দুইজন বোরকা পরা মহিলা ছিল । ঘটনাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম স্যারকে জানালাম, তিনি বললেন এরকম অভিযোগ আগেও শোনা গেছে, যেভাবে হোক এ চক্রটিকে ধরতেই হবে। আমি সোনালী ব্যাংকসহ আশে পাশের সব সিসি ক্যামেড়া ফুটেজ চেক করলাম কিন্তু আশানুরুপ ফল পেলাম না । পুলিশ সুপার স্যার বললেন লেগে থাকতে । পাবনা থানায় মামলা রুজু হলো ১০/০১/২০২০ইং তারিখে । তদন্তভার দেওয়া হলো আমাকে । আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে চুল ছেড়া বিশ্লেষন করে দুইজন সন্দেহভাজনকে সনাক্ত করলাম । ডিবি পাবনার একটি টিম নিয়ে বগুড়া শহরে গিয়ে দুজন আসামী ইরাক এবং মমতাকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজত হতে চুরি যাওয়া টাকার মধ্য হতে ০২ লক্ষ ০৩ হাজার টাকা এবং আসামীদের চোরাইলব্ধ টাকা দিয়ে কেনা তিনটি দামী টেলিভিশন উদ্ধার করে নিবিড়ভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলাম । নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল অন্যরকম চুরির তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদে দুই চোর স্বীকার করে যে, তারা একটি চোর চক্র চালায়। এ চক্র বিভিন্ন জেলায় চুরি করে । এ গ্রুপের প্রধান একজন নারী যাহার নাম শেলি(ছদ্মনাম)। তার বাড়িও বগুড়া থানা এলাকায় । এ গ্রুপের মোট সদস্য ০৫ জন্য। তারা প্রধানত বগুড়া ছাড়া অন্যান্য জেলায় কৌশলে টাকা চুরি করে । তারা প্রথমে কোন জেলার সোনালী বা অন্য কোন ব্যস্ততম ব্যাংককে টার্গেট করে, যেদিন ঘটনা ঘটাবে আসামীগণ সে দিন ঐ জেলার উদ্দেশ্যে সকালে বগুড়া থেকে রওনা করে। তারপর আসামীগণ সে জেলায় গিয়ে শহরে অবস্থিত যেকোন ব্যস্ততম ব্যাংকের মধ্যে এবং আশে পাশে অবস্থান নেয়। প্রথমত আসামীগণ মহিলা যাদের কাছে সদ্য ব্যাংক থেকে তোলা নগদ টাকা ব্যাগের ভিতর থাকে তাদেরকে টার্গেট করে এবং অনুসরন করতে থাকে, সুযোগে জটলা তৈরী করে ভিকটিমকে আসামীগণ কৌশলে ঘিরে হাটতে থাকে এবং প্রধান আসামী শেলি ভিকটিমের গা ঘেষে হাটতে থাকে এবং তার শরীরে থাকা বড় ওড়না দিয়ে উক্ত জটলার ভিতর ভিকটিমের কাছে থাকা ব্যাগটিকে ঢেকে তার ভিতর থেকে অভিনব কৌশলে টাকা বের করে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে । ঠিক একইভাবে আসামীগণ গত ০৮/০১/২০২০ইং তারিখে সোনালী ব্যাংকের সামনে হইতে সামান্য দূরে পাকা রাস্তার উপর বাদীর স্ত্রীর নিকটে ব্যাগে থাকা ০৫ লক্ষ টাকা চুরি করে মাইক্রোবাসে করে পাবনা শহর ত্যাগ করে । বিজ্ঞ আদালতে আসামীদ্বয় নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেছে । তারা বর্তমানে পাবনা জেল হাজতে আটক আছে । ধন্যবাদ ১।পুলিশ সুপার পাবনা স্যার। ২। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) স্যার। ৩। ডিবি বগুড়া টিম ৪। এলআইসি এসবি এবং এলআইসি হেডকোয়াটার্স, ঢাকা। লেখক এসআই অসিত কুমার বসাক, জেলা গোয়েন্দা শাখা, পাবনা।







সর্বশেষ সংবাদ